শনিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

মুক্তি, মুক্ত, খালাস ও ন্যায় বিচার


 "Immunity" শব্দের অনুভূতি একেক ক্ষেত্রে একেক রকম। নিরাপরাধ হোক বা অপরাধী চোখই হোক সে খুজে ফিরে মুক্তির আনন্দ। আর একজন ভুক্তভুগি খালি খুজে এক টুকরো ন্যায় বিচার লেখা সাদা পাতা। সেই সাদা পাতাইয় লেখা তাদের ভার মুক্তির গল্প।

" তাজরিন গার্মেন্টেস" এর ৩ বছর চলছে। ২৪ নভেম্বর ২০১২ এর এক শীত শীত দিনে আশুলিয়া অঞ্চল হঠাৎ উষ্ণ হয়ে ঊঠেছিলো "তাজরিন" এর ভয়াল অগ্নী শিখায়। সেই আগুনে ১১২ জন কর্মচঞ্চল হাত নিমিষে থমকে গেছে, লেগেছিলো বেওয়ারিশ লাশের মিছিল। আমরা সাধারন মানুষরা সে দিন হতবাক হয়ে চেয়েছিলাম সাভারের আশুলিয়ার আকাশের কালো ধোয়ার মাঝে মৃত্যুর হুংকার শুনে। 

নানা দিক-বেদিক অবলকনের পর অবশেষে তাজরিন গার্মেন্টস এর অগ্নিকান্ডে অভিযুক্ত ১৩ জনের বিরুদ্ধা আনুষ্ঠানিক ভাবে আইনি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর অবশেষে তাজরিনের দুই মালিক দেলোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তার সহ মোট ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়। কিন্তু ন্যায়ের পথে কি এটি পরিপূর্ন পদক্ষেপ?

দোষ কিন্তু সে সকল সরকারি ইন্সপেটারদেরো কম নয় যারা নিয়মিত ইন্সপেকশনের মাধ্যমে নিশ্চিত করেনি একটি নিরাপরাধ কর্মপরিবেশের। হয়তোবা তারা নিরাপত্তার অভাব দেখেও এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। সে সকল পরিদর্শকেরও কিন্তু দায় এড়িয়ে যাবার কোন উপায় থাকা উচিত না। তারা সঠিক সচেতনতা দেখালে আমাদের দেশে স্পেক্ট্রাম গার্মেন্টস থেকে শুরু করে আশুলিয়ার তাজরিন ফ্যাশন বা সাভারের রানা প্লাজা অথবা দেশের নানা প্রান্তে ঘটে যাওয়া অসংখ্য দুঃর্ঘটনায় হাজার হাজার মানুষ নিহত হতো না। তাদের দায়িত্ব নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা ও বাংলাদেশের স্বর্ন সম্পদ গার্মেন্টস শিল্প ও এর সাথে জড়িত দের জীবনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদান করা। যেহেতু তাদের অনেকি এই কাজটি এড়িয়ে যান তাই অবশ্যই তাজরিনের সাথে জড়িত পরিদর্শকদেরও কিছুটা দায় ভার গ্রহন করে শাস্তির মুখোমুখি হবার দরকার ছিলো।

এ নিয়ে আজ অনেকেই সোচ্চার। মানব অধিকার ও NGO দের নিয়ে কাজকরা সংঘটন FIDH এর প্রেসিডেন্ট কারিম লাহদিজ এ নিয়ে বলেছেন,

“Giving immunity to government officials who ignore safety violations reinforces the culture of impunity in Bangladesh, and allows the continuation of the flagrant abuses that permeate Bangladesh’s garment industry,”

আমি ব্যাক্তিগত ভাবে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংঘটন SAFE এর সাথে জড়িত। কাজের স্বার্থে বহু শ্রমিক এবং গার্মেন্টস রিলেটেড ব্যাক্তির এর সাথে কাজ করা হয়েছ।  এছাড়া ২০১২ সালে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্রত অবস্থায়ও আমি তাজরিনের দুঃর্ঘটনার পরে আমাদের দেওয়ান মিজান স্যার এর সাথে মিলে এর প্রতিবাদে ২০১২ এর ১৬ ডিসেম্বরে একটি প্রতিবাদি আর্টফর্ম উপস্থিত করেছিলাম শাহাবাগ এর জাতীয় যাদুঘরের সামনে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থেকে শুরু করে, দেশী বিদেশী সকলে মিলে অংশ নিয়েছিলো এই প্রতিবাদে। সবখানেই সকলের শুধু একটিই চাওয়া ছিলো। শ্রমিক এর জীবনের জন্য ন্যায্য নিরাপত্তা ও কর্মপরিবশের নিশ্চয়তা।এখনো আমাদের সেটাই চাওয়া শ্রমিকদের মৃত্যু থেকে মুক্তি ও ন্যায় বিচার।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন