মঙ্গলবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮

সোমবার, ৩০ জুলাই, ২০১৮

Dino Shafeek, A Bangladeshi Sitcom Hero

বাংলাদেশের গোলাম ডিনো সফিক (পূর্ব নাম মহিউদ্দিন জাহাঙির, পরবর্তীতে তিনি নাম পরিবর্তন করেন) এর নাম শুনে মনে হয়তো কোন ভিরিক্কি চালে হেটে আসা ব্যাবসায়ীর চেহারা মাথায় আসলেও তিনি একজন আলী নাদিম হয়েই হয়তো মৃত্যুর এতো বছর পরেও ফিরে আসবেন পর্দায়। মনে আসে কি তার কথা?? মনে আসার কথা নয়। কারন হয়তো বেশীর ভাগ মানুষই তাকে “Mind your Language” এর পাকিস্তানের আলী নাদিম হিসেবে চেনেন। অসাধারন এই কমিডি সিটকম অভিনেতার অস্তিত্ব অনেকটাই অপ্রকাশিত ও অজানাই রয়ে গেছে বাংলাদেশের মুভি লাভারদের কাছে।
ডিনো সফিক নামে পরিচিত এই বাংলাদেশী অভিনেতা ১৯৩০ সালে বৃটিশ শাসিত ঢাকায় জন্মগ্রহন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে তিনি ১৯৫৪ সালে ততকালিন পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান আমাদের বাংলাদেশ) থেকে যুক্তরাজ্যে চলে যান। শফিক ঢাকায় অপেশাদার থিয়েটারের সঙ্গে জড়িত ছিল এবং অভিনয় খুব পছন্দ করতো তাই তিনি যুক্তরাজ্যে যেয়ে Guildhall School of Music and Drama এ অভিনয় নিয়ে পড়াশোনার পর সেখানে তার অভিনয় এর কেরিয়ার গড়ে তুলেন। পরবর্তীতে তিনি বৃটিশ নাগরিত্ব গ্রহন করেন। তিনি বিরল বাংলাদেশী অভিনেত্রীদের মধ্যে একজন যে কিনা ৭০ এর দশকে আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে নাম কুড়িয়েছিলেন অভিনয় দিয়ে।
ডিনো শফিক জনপ্রিয়তা পান সিটকম সিরিয়ালে অভিনয়ের মাধ্যমে। তিনি ১৭টির মত সিরিয়ালে ও ৭টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। সাথে সাথে তিনি ১১টি টথিয়েটারেও অভিনয় করেছেন। তাঁর প্রথম ছবি ছিল ১৯৬৭ সালে মুক্তি পাওয়া 'দ্য লং ডুয়েল', যেখানে তিনি 'আকবর' চরিত্রে অভিনয় করেন।



তিনি তার কমেডি অভিনয় দিয়ে মাতিয়েছেন ততকালিন পর্দায় সকল হাস্যরসাত্বক মূহূর্ত্ব। তার উল্ল্যেখযোগ্য চরিত্র গুলর মাঝে সর্ব প্রথম দর্শকদের সামনে আসেন বৃটিশ ইণ্ডিয়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালিন প্রেক্ষাপটে নির্মিত সিটকম “It Ain't Half Hot Mum” এর চা ওয়ালা মোহাম্মাদ চরিত্রের মাধ্যমে। তার “চা গরম চা” নাটকটির অন্যতম আকর্ষন। তিনি নাটকটির সিনের মাঝে গানের মাধ্যমে বর্ননা করে বিশ্বযুদ্ধ কালীন জনপ্রিয় যন্ত সংগীত গাইতেন। এই সিরিয়ালোটি তার অভিনয় জীবনের উল্ল্যেখ যোগ্য মোড় এনে দিয়েছে। এর পরেই তিনি অভিনয় করেন জনপ্রিয় বৃটিশ সীটকম “ Mind Your Language” এ।
মাইন্ড ইয়োর ল্যঙ্গুয়েজ সিটকমের "আলী নাদিম" চরিত্রটি একজন মুসলমান পাকিস্তানি শিক্ষার্থির। যে কিনা যুক্তোরাজ্যে অবস্থান কালীন একজন বিদেশী যিনি ইংরেজী ভাষ শিক্ষার জন্য ভাষ শিক্ষ্যা স্কুলে পড়তে এসেছেন। পুরো সিরিয়াল জুড়ে অসাধারন অভিনয় করে ঊঠা অনেক অভিনেতা ও চরিত্র রয়েছে, কিন্তু সদা হাস্য মুখের নাদিমের অভিনয় এতটায় অসাধারন যে একবার দেখার পর কারো চেহারা মনে না থাকলেও তার চরিত্রটি সব সময় মনে থাকবে। তার সব সময়ে দেরিতে ক্লাশে ঢুকে সবাইকে “হ্যালো এভরিবডী” বলে মনোযোগ ভাঙানো হোক বা সদা সরাসরি মত প্রকাশ করে ফেলার দৃশ্য হোক, ডিনো শফিক অভিনয় করেছেন উজ্জলতার সাথে। তার চরিত্রটি স সময় সকলের মাঝেও জ্বলজ্বল করে ভেসে ঊঠেছে তার অভিনয় মুন্সিয়নায়। তার মুখের নানা সময় বুঝে অসাধারন সকল উক্তি রঙ দিয়েছে সিটকমের তার অভিনিত ৩ সিজনের প্রতিটি পর্বে। সিটকমের ৪র্থ সিজনটি তাকে ছাড়াই হয়েছে কারন মাত্র ৫৩ বছর বয়সে ১৯৮৪ সালে ইংল্যান্ডের লণ্ডনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যূ বরন করেন। তাই তাকে ছাড়াই তার অভিনিত সেরা সিটকমের শেষ সিরিজ এর টেলিকাস্ট হয়।
ডিনো সফিক তার কাজ দিয়ে আন্তজাতিক মিডিয়ায় উল্ল্যেখিত হয়ে থাকলেও তিনি আমাদের কাছে অজানাই রইলেন। হয়তো বাংলাদেশে ফিরে আসা হয়ে ঊঠেনি কিন্তু সারা বিশ্ব কিন্তু এখনো তাকে বাংলাদেশের বংশঊদ্ভত বৃটিশ অভীনেতা বলেই উল্ল্যেখ করে থাকে।
এখনো লাখো ভক্ত তার কাজের প্রশংসা করে থাকেন। হয়তো তাকে "আপনার অনুভূতি কি? জিজ্ঞাসা করলে উত্তর পেতাম তার কাছ থেকে।
- জলি গুড স্যার, স্কুইজ মি প্লিজ।